আসবাবপত্র কেনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কারণ এটি শুধুমাত্র আপনার ঘরের দরকারে কিনবেন না, বরং আরামদায়ক পরিবেশ পাবার জন্য কিনবেন। আপনি যদি সঠিক আসবাব নির্বাচন না করেন, ঘরের মধ্যে চলাফেরার অসুবিধাসহ মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আসবাবপত্র কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যা নিয়ে আজকের ব্লগে আলোচনা করা হবে।
কেন আসবাবপত্র নির্বাচন করা এতটা কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ?
আসবাবপত্র আপনার ঘরের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে। শুধু আপনার শখ বা স্টাইলের প্রকাশ নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করবে এই আসবাবগুলো। আর তাই, সঠিক আসবাবপত্র নির্বাচন করা আপনার বাসস্থানকে সুন্দর, আরামদায়ক এবং কার্যকরী করে তোলে। ভুল আসবাবপত্র নির্বাচন করলে খরচ তো বাড়বেই, সাথে ব্যবহারের দিক থেকেও অসুবিধা হতে পারে।
ঘরের মান বৃদ্ধি করতে কোন কোন আসবাবপত্র প্রয়োজন হবে?
ঘরের শৈলী এবং সাইজ অনুযায়ী আসবাবপত্রের নির্বাচন করতে হয়। যেকারণে হাতিল-এর মত ফার্নিচার ব্র্যান্ড বিভিন্ন সাইজের সোফা, টেবিল ও বুক সেলফ ডিজাইন করে থাকে। পারফেক্ট সাইজের জিনিস কিনলে মনে হবে সবকিছু সুন্দরভাবে আছে এবং রুমের মধ্যে জায়গা ও বেশি মনে হবে। চলুন জেনে নিই কি কি কেনা মাস্ট!
- বুক শেলফ: আপনার রিডিং স্পেস বা ড্রয়িং রুমের শোভা বৃদ্ধি করতে একটি ভাল বুক শেলফ অপরিহার্য। বুকশেলফে বই রাখার জায়গা হিসেবে ধরলে ভুল করবেন। ঘরের এস্থেটিকস ডেবেলপ করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান তৈরি করে।
- সোফা সেট: বসার জায়গা হিসেবে এটি খুবই প্রয়োজনীয়। আরামদায়ক সোফা আপনাকে দীর্ঘ সময় বসতে সাহায্য করবে এবং ঘরের স্টাইলও বাড়াবে। বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন রকম মডুলার সোফা দেখা যায় যা একটা ফিউচারিস্টিক রুক নিয়ে আসে। আবার সোফাকে ঘুমানোর বেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
- ডাইনিং টেবিল: পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি ভাল ডাইনিং টেবিল নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে সহায়ক এবং দৈনন্দিন ব্যবহারেও উপকারী। এমন টেবিল নিতে হবে যেখানে দীর্ঘসময় বসে আড্ডা দেওয়া যায়।
- কম্প্যাক্ট টেবিল বা কোণার টেবিল: ছোট ঘরের জন্য এই ধরনের আসবাবপত্র উপযুক্ত, যা জায়গা বাঁচায় এবং একাধিক ব্যবহারেও আসতে পারে। অনেকে সেন্টার টেবিলকে কম্প্যাক্ট টেবিলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে।
- অলওয়ার্ড কেবিনেট: ব্যবহৃত বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সুন্দরভাবে রাখার জন্য একটি অলওয়ার্ড কেবিনেট খুবই উপকারী। কেবিনেট না কিনে ভিন্নকিছু খুঁজলে চেস্ট অব ড্রয়ার, রেক, আলমিরার মত বড় বড় আইটেমে সবরকম জিনিস রাখা লাগবে।
কিভাবে অল্প বাজেটেও সেরা আসবাবপত্র পাওয়া যায়?
অল্প বাজেটে সেরা আসবাবপত্র পাওয়া সম্ভব, তবে কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হবে, যেমন অফার ও ডিসকাউন্ট খোঁজা একটা দারুণ ট্যাকটিকস। অনলাইনে বা শপিং মলে অনেক সময় অফার বা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়, সেগুলি কাজে লাগান। এসব হয়ে গেলে এমন আসবাব নির্বাচন করুন যেগুলি একাধিক কাজে ব্যবহার হতে পারে। যেমন, একটি সোফা বেড হিসেবে ব্যবহার করা। পাশাপাশি দাম কমাতে কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে যেমন, কাঠের পরিবর্তে অন্য কোনও সস্তা উপকরণ ব্যবহার করা।
আসবাবপত্র কেনার সময় কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হবে?
আসবাবপত্র কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত, যাতে আপনার কেনাকাটা হয় কার্যকরী, বাজেট-বান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদী। নিচে আসবাবপত্র কেনার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা তুলে ধরা হলো—
১. প্রয়োজন এবং ব্যবহারযোগ্যতা
কোন আসবাবটি আপনার জন্য বেশি প্রয়োজনীয়, তা আগে নির্ধারণ করুন। আসবাবটি কতবার এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তা বিবেচনা করুন। আর অবশ্যই অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় আসবাব কেনা এড়িয়ে চলুন।
২. ঘরের আকার এবং জায়গা
আসবাব কেনার আগে ঘরের আকার মেপে নিন এবং কোথায় সেট করবেন তা ঠিক করুন। মনে রাখবেন অতিরিক্ত বড় বা ছোট আসবাব ঘরের শৈলীর ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই জায়গা বাঁচানোর জন্য মাল্টি-ফাংশনাল আসবাব বেছে নিতে পারেন।
৩. গুণগত মান এবং উপকরণ
আসবাবের কাঠামো ও উপাদান পরীক্ষা করুন। কাঠ, মেটাল, গ্লাস, বা প্লাস্টিক, কোন উপাদান দীর্ঘস্থায়ী এবং আপনার বাজেটের মধ্যে পড়ে তা বিবেচনা করুন। যদি কাঠের আসবাব কেনেন, তবে শীশাম, সেগুন বা ওক কাঠের তৈরি আসবাব বেশি টেকসই হয়।
৪. আরামদায়কতা
আসবাবের ডিজাইন শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না, এটি ব্যবহারেও আরামদায়ক হতে হবে। বিশেষ করে সোফা, চেয়ার বা বেড কেনার সময় আরাম কতটুকু তা পরীক্ষা করে নিন।
৫. ডিজাইন ও শৈলী
আসবাব ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সাথে মানানসই কিনা তা খেয়াল করুন। আধুনিক, মিনিমালিস্ট, বা ট্র্যাডিশনাল— কোন স্টাইল আপনার ঘরের সাথে মানানসই তা বিবেচনা করুন। রঙ এবং ফিনিশিং দেখে নিন যাতে এটি ঘরের পরিবেশের সাথে মানিয়ে যায়।
৬. টেকসই ও দীর্ঘস্থায়িত্ব
আসবাবের গঠন শক্তিশালী কিনা তা পরীক্ষা করুন। আসবাবপত্রের জোড়া (joints), ফিনিশিং ও ওয়ারেন্টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। নিম্নমানের উপকরণে তৈরি আসবাব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে বাড়তি খরচের কারণ হতে পারে।
৭. বাজেট এবং মূল্যমান
আসবাব কেনার আগে একটি নির্দিষ্ট বাজেট নির্ধারণ করুন। কমদামে মানসম্মত আসবাব কেনার জন্য ডিসকাউন্ট, সিজনাল সেল বা অফারের দিকে নজর দিন। লোভী ও অভিজ্ঞতাবিহীন মানুষের কথা শুনে সস্তার পণ্য কিনতে গিয়ে নিম্নমানের আসবাব কিনবেন না।
৮. ব্র্যান্ড ও রিভিউ
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বা নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে আসবাব কেনার চেষ্টা করুন। অনলাইন রিভিউ বা ক্রেতার ফিডব্যাক দেখে আসবাবের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।
৯. ওয়ারেন্টি ও বিক্রয়োত্তর সেবা
আসবাবের উপর কত বছরের ওয়ারেন্টি আছে তা দেখুন। অনেক সময় আসবাবপত্র পরিবহনের সময় ক্ষতি হতে পারে, তাই বিক্রয়োত্তর সেবার বিষয়টি জেনে নিন। যদি ইনস্টলেশনের প্রয়োজন হয়, তবে দোকান থেকে সেটআপ সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আসবাব কেনার আগে প্রয়োজন, বাজেট, গুণগত মান, আরামদায়কতা, এবং দীর্ঘস্থায়িত্বের বিষয়গুলো বিবেচনা করলে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি কমে যায়। স্মার্ট কেনাকাটার মাধ্যমে আপনি আপনার ঘরকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন। তাই, সময় নিয়ে পরিকল্পনা করুন, সঠিক পছন্দ করুন, এবং আপনার বাজেটের মধ্যে থেকেই মানসম্পন্ন আসবাব কিনুন।